মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:০১ অপরাহ্ন

শিরোনাম :

নির্বাচন করতে পারবে না ফেরারি আসামিরা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে কোনো ফেরারি (যে কোনো মামলায় পলাতক ঘোষণা) আসামি প্রার্থী হতে পারবে না বলে নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা, সর্বোচ্চ ব্যয়সীমার পরিবর্তে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে ব্যয় খবর নির্ধারণসহ বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব আনা হয়েছে। মঙ্গলবার এসব বিধান যুক্ত করে আরপিও সংশোধনীর জন্য আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কার প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা করে ইসি। এরপর আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়, সেখানে বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবনা আইন মন্ত্রণালয়ের ভোটিংয়ের পর তা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হবে। উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হলে এরপর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনে সংশোধনী যুক্ত হবে।

জানা গেছে, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রথমবারের মতো ফেরারি আসামিদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণার বিধান আরপিওতে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যক্তি আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে প্রার্থী হতে পারেন না।

ফেরারি আসামি নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার বিধান যুক্ত করার বিষয়ে ইসি সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, যে কোনো ফৌজদারি মামলায় ফেরারি আসামি হলে অযোগ্য হবেন। অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকে এটা করতে চাইনি। বাস্তবতার নিরিখে এটা করা হয়েছে। তবে সামনে যদি অপব্যবহার হয়, তবে আবার এটা পর্যালোচনা করতে হবে।

ফেরারি আসামিদের নির্বাচনে অযোগ্য করার বিধান সংযোজনের সুপারিশ করেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে তখন এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছিল ইসি। তারা বলেছিল, এমন বিধান অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, এটি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন আছে।

আগে দ্বিমত জানিয়ে এখন কেন এই প্রস্তাব ইসি গ্রহণ করল, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে। আলোচনায় নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনে করেছে এমন বিধান রাখা ভালো হবে। তিনি বলেন, সামনে যদি এটির অপব্যবহার হয়, তখন প্রয়োজনে আবার সংশোধন করা যাবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান করার প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনের, তবে এটি ইসির প্রস্তাবে রাখা হয়নি।

আরপিওর নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচিত হলেও সংসদ সদস্য পদ চলে যেতে পারে উল্লেখ করে সানাউল্লাহ বলেন, হলফনামায় তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিলে ইসি পরেও ব্যবস্থা নিতে পারবে। দোষ প্রমাণ হলে সেই ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদও হারাবেন।

এই নির্বাচন কমিশনার জানান, এবার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থাকলেও অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়নি।

এ নির্বাচন কমিশনার জানান, অনিয়ম হলে রিটার্নিং অফিসার একটি বা একাধিক কেন্দ্র বা পুরো আসনের নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন।

সর্বোচ্চ ব্যয়সীমার বিধান বাতিল করে কেবল ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারে আসনের ভোটার সংখ্যার সমান ব্যয়ের বিধান করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা হারের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনি ব্যয়ের বিধান আছে। এতে কিছু আসনে প্রার্থী প্রতি ৩-৪ টাকার বেশি ব্যয় করার সুযোগ ছিল না। এবার ভোটার প্রতি ১০ টাকা হারে ব্যয়ের সুযোগ রেখে প্রস্তাব দেওয়ায় ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার প্রার্থী ৫০ লাখেরও বেশি ব্যয় করতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, আগে প্রিজাইডিং অফিসারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত ছিল। মাঝখানে এটা সংশোধন করে বিধান করা হয়েছিল যে, ভোট শুরুর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি দেখবে, তারা রিপোর্ট দিলে প্রিজাইডিং অফিসার ভোট শুরু করবেন। আমরা এটাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়েছি। এতে কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হবেন সর্বেসর্বা।

তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ কে কতক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে থাকবেন তা নির্ধারণের ক্ষমতাও প্রিজাইডিং অফিসারকে দেওয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved Meherpur Sangbad © 2025